uric acid test কেন করা হয় ? ইউরিক এসিড বেশি বা কম হলে কি হয়? নরমাল কত, খরচ কত? || uric acid test details.

uric acid test কি এবং কেন করা হয়? আজকে আমরা ইউরিক এসিড টেস্ট নিয়ে আলোচনা করবো। ইউরিক এসিড টেস্ট সম্পর্কে যে সকল বিষয় জানা দরকার। নরমাল রেঞ্জ,টেস্ট এর দাম,বেড়ে গেলে বা কমে গেলে কি হতে পারে সকল বিষয়।

uric acid test কি?

uric acid test হল একটি মেডিকেল পরীক্ষা যা আপনার রক্তে বা প্রস্রাবে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা নির্ণয় করতে করা হয়। ইউরিক অ্যাসিড হল একটি বর্জ্য পদার্থ যা নির্দিষ্ট খাবারে পাওয়া যায় এবং প্রাকৃতিকভাবে শরীর এর ভিতরে উত্পাদিত হয়। বেশিরভাগ ইউরিক অ্যাসিড কিডনি দ্বারা ফিল্টার হয়ে প্রস্রাবে নির্গত হয়, কিছু রক্তের প্রবাহে থাকে যায়।

uric acid test কেন করা হয়?

ইউরিক অ্যাসিড পরীক্ষা বিভিন্ন কারণে করা হয়ে থাকে:

uric acid test sample
uric acid test sample

 

  1. গেঁটেবাত রোগ নির্ণয়: জয়েন্টগুলোতে ইউরিক এসিড ক্রিস্টাল জমা হওয়ার কারণে গেঁটেবাত হয়। রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের অধিক মাত্রা বাত ব্যাথা হওয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। Uric acid গেঁটেবাত রোগ নির্ণয় নিশ্চিত করতে এবং এটিকে অন্য ধরনের আর্থ্রাইটিস থেকে আলাদা করতে সাহায্য করে।
  2. গাউট চিকিত্সা পর্যবেক্ষণ: ইতিমধ্যেই গাউট এ আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য, চিকিত্সার কার্যকারিতা জানার জন্য ইউরিক অ্যাসিড পরীক্ষা ব্যবহার করা হয়। এটি ওষুধ বা জীবনধারার নানা অভ্যাস গুলির কারণে গাউট আক্রমণ প্রতিরোধ করছে কিনা বা অ্যাসিডের মাত্রা হ্রাস করছে কিনা সেটি নির্ধারণ করতে সাহায্য করে ।
  3. কিডনিতে পাথরের সনাক্ত করতে: প্রস্রাবে ইউরিক অ্যাসিডের উচ্চ ফলাফল কিডনিতে পাথর তৈরিতে অবদান রাখতে পারে। ইউরিক অ্যাসিড পরীক্ষা, অন্যান্য পরীক্ষার সাথে, কিডনি পাথর গঠনের ঝুঁকি নির্ণয় করতে সাহায্য করে এবং যথাযথ চিকিৎসা ব্যবস্থা নিতে সাহায্য করে।
  4. কিডনির কার্যকারিতা মূল্যায়ন: ইউরিক অ্যাসিড কিডনির সাহায্যে নির্গত হয়। ইউরিক অ্যাসিড পরীক্ষা করে কিডনির কার্যকারিতা সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতে পারা যায়। অধিক uric এসিড এর মাত্রা কিডনি কার্যকারিতা বা কিডনি এর ব্যাধি সনাক্ত করতে পারে।
  5. ক্যান্সারের চিকিত্সা পর্যবেক্ষণ: ক্যান্সার, যেমন লিউকেমিয়া এবং লিম্ফোমা, কোষের ভাঙ্গন বৃদ্ধি করতে পারে, যার ফলে uric acid এর মাত্রা বেড়ে যায়। ইউরিক অ্যাসিড পরীক্ষা ক্যান্সার চিকিত্সার কার্যকারিতা এবং টিউমার সম্পর্কেও ধারণা পেতে সাহায্য করে।
  6. নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ: কিছু ওষুধ, যেমন মূত্রবর্ধক এবং কিছু কেমোথেরাপির ওষুধ ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রাকে বাড়াতে পারে। যখন এই ওষুধগুলি দেয়া হয় তখন ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা জেনে নেয়া গুরুত্বপূর্ণ।

uric acid test খরচ কত – uric acid test price in bangladesh:

uric acid test এর দাম ডায়াগনস্টিক সেন্টার ভেদে হালকা কম বেশি হতে পারে। বিভিন্ন জায়গায় হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার ভেদে বা টেস্ট কোন মেশিন এ হয় তার উপরে নির্ভর করে দাম হালকা কম বেশি ও হয়।

পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ইউরিক এসিডের ২০২৩ এর আপডেট টেস্ট এর দাম –

  • Serum Uric Acid টেস্ট এর দাম 500 টাকা।
  • 24 hrs. Urine for Uric Acid এর দাম 500 টাকা।
  • Urinary Uric Acid এর দাম 500 টাকা ।

সরকারি হসপিটাল এ Uric Acid টেস্ট এর দাম ১০০ টাকা ,২০২০ সালের দাম।

uric acid test preparation বা প্রস্তুতি:

ইউরিক এসিড পরীক্ষার টেস্ট করতে সাধারণত তেমন কোন স্পেশাল প্রিপারেশন থাকে না। তবে চিকিৎসা চলাকালীন ঔষুধ খাবার বিষয় এ ডাক্তার এর সাথে পরামর্শ নিতে হবে । অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে।

uric acid test স্যাম্পল কালেকশন:

ইউরিক এসিড টেস্ট করতে রক্তের সিরাম (serum) লাগে এবং এটি রেড টিউব (red tube) এ সংগ্রহ করা হয়।

আরও পড়ুনঃ electrolytes test কি এবং কেন করা হয়? নরমাল কত, খরচ কত?electrolytes test all details in bangla.

uric acid test রিপোর্ট ডেলিভারি সময়:

ইউরিক এসিড একটি বায়োকেমিক্যাল টেস্ট অটোমেটেড মেশিনে করতে ৮-১৫ মিনিট সময় লাগে।

বিভিন্ন অটো মেশিনগুলিতে যেমন Beckman coulter,cobas vitros,advia ইউরিক এসিড টেস্ট খুব কম সময় এই হয়ে যায়। তব স্যাম্পল কালেকশন করতে সেটাকে ক্লটিং হতে এবং সেন্ট্রিফুজেন করে ,টেস্ট করে রিপোর্ট ছাড়তে কিছু সময় লেগে যায়।

uric acid এর

  • আর্জেন্ট রিপোর্ট ১-২ ঘণ্টা
  • নরমাল ডেলিভারি সময় ৭-৮ ঘণ্টা বা ১ দিন।

তবে ল্যাব বা হসপিটাল ভেদে এবং জনবল অনুযায়ী ডেলিভারি সময় এর কম বেশি হতে পারে ।

uric acid test নরমাল কত :

uric acid test এর নরমাল লেভেল নারী ও পুরুষ ভেদে হয়ে থাকে ।

uric acid test report

 

  • পুরুষ এর ক্ষেত্রে নরমাল 3.00 থেকে 7.00 mg/dl.
  • মহিলা দের নরমাল 2.40 থেকে 5.70 mg/dl.

রিপোর্ট এর ইউনিট mg/dl.

তাহলে বুঝতেই পারলেন আপনার শরীরে ইউরিক এসিড এর মাত্রা কত থাকলে সেটিকে নরমাল হিসাবে ধরা যেতে পারে।

তবে রিপোর্ট দেখার আগে অবশ্যই পাশে থাকা রিপোর্ট ইউনিট দেখে নিবেন। কারন ল্যাব ভেদে ইউনিট ও ভিন্ন থাকতে পারে।

আরও পড়ুনঃ CRP test কি? CRP test কেন করা হয়? খরচ কত? CRP বেশি হলে কি হয়?

ইউরিক এসিড বেশি হলে কি হয় ?

রক্তে uric acid এর মাত্রা বৃদ্ধিতে বেশ কয়েকটি কারণ থাকতে পারে:

  1. Uric এসিড এর অত্যধিক উত্পাদন: বিভিন্ন কারণে শরীর অত্যধিক পরিমাণে ইউরিক অ্যাসিড তৈরি হতে পারে, যেমন উত্তরাধিকারসূত্রে পরিবার থেকে পাওয়া, কিছু চিকিৎসা এর জন্য (যেমন, লিউকেমিয়া, লিম্ফোমা, সোরিয়াসিস), বা কিছু ওষুধ (যেমন, মূত্রবর্ধক, অ্যাসপিরিন) )
  2. কিডনি ফাংশন: কিডনি ফিল্টারিং এবং শরীর থেকে uric acid নিষ্কাশন করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিডনি সঠিকভাবে কাজ না করলে, সেটি পর্যাপ্ত uric acid ফিল্টার করতে পারে না , যার ফলে এটি রক্ত ​​​​ বাড়তে থাকে ।
  3. ডায়েট: পিউরিন সমৃদ্ধ খাবার খাবার কারণে uric এসিড অধিক মাত্রায় বৃদ্ধি পেতে পারে। পিউরিন প্রাকৃতিকভাবে কিছু খাবারে পাওয়া যায়, যার মধ্যে রয়েছে অর্গান মিট (লিভার, কিডনি), সামুদ্রিক খাবার (অ্যাঙ্কোভিস, সার্ডিন), লাল মাংস এবং অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় (বিশেষ করে বিয়ার)। পিউরিন ভেঙ্গে গেলে uric acid তৈরি হয়।
  4. স্থূলতা: অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা uric acid এর মাত্রা বৃদ্ধির কারন হতে পারে । স্থূলতা ইউরিক অ্যাসিড বিপাককে প্রভাবিত করতে পারে, যা রক্তে উচ্চ মাত্রার সৃষ্টি করে।
  5. অ্যালকোহল সেবন: অ্যালকোহল বিশেষ করে,বিয়ার যা উচ্চ পিউরিন সামগ্রীর কারণে uric acid মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
  6. অন্যান্য রোগ: কিছু রোগ, যেমন বিপাকীয় লক্ষণসমূহ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং কিডনি রোগ, ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধির সাথে যুক্ত।

ইউরিক এসিড কমে গেলে কি হয় ?

রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমে যাওয়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে:

  1. ওষুধ: কিছু ওষুধ, যেমন অ্যালোপিউরিনল বা প্রোবেনিসিড, সাধারণত গাউট বা হাইপারইউরিসেমিয়া (উচ্চ ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা) রোগীদের uric acid মাত্রা কমানোর জন্য ব্যাবহার করা হয়। এই ওষুধগুলি ইউরিক অ্যাসিডের উত্পাদন কমিয়ে ফেলে বা শরীর থেকে এর ফিল্টার করে বেড় করে দেয়, যার ফলে রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা হ্রাস পেতে পারে।
  2. খাদ্যতালিকাগত পরিবর্তন: পিউরিন ভেঙ্গে গেলে শরীরে uric acid তৈরি হয়। পিউরিন নির্দিষ্ট কিছু খাবারে পাওয়া যায়, যেমন অর্গান মিট, সামুদ্রিক খাবার । খাদ্যে তালিকাতে পিউরিন-সমৃদ্ধ খাবার কমে গেলে রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
  3. ওজন হ্রাস: ওজন হ্রাস, বিশেষ করে যারা অতিরিক্ত ওজন বা স্থূল, তাদের ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা হ্রাস পেতে পারে। কারণ ওজন কমলে ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের উৎপাদন কমে যায়।
  4. কিডনির অধিক কার্যকারিতা: ইউরিক অ্যাসিড প্রাথমিকভাবে কিডনির মাধ্যমে রক্তে বা প্রসাবে নির্গত হয়। কিডনির কার্যকারিতার বেড়ে গেলে শরীর থেকে বেশি ইউরিক অ্যাসিড বের হয়ে যেতে পারে, যার ফলে রক্তে uric acid এর মাত্রা কমে যায়।
  5. দীর্ঘদিন রোগে আক্রান্ত হলে: কিছু রোগ, যেমন দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ বা কোষের অত্যধিক ভাঙ্গনের কারণ, রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমতে থাকে । এই অবস্থাগুলি শরীর থেকে ইউরিক অ্যাসিডের উত্পাদন কমিয়ে ফেলে

 

আজকের পোষ্ট এই পর্যন্তই আমদের পোস্টটি ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করতে ভুলবেন না।
আর চিকিৎসা সংক্রান্ত বিভিন্ন আপডেট পেতে oviggobd হয় পেজটিতে অবশ্যই লাইক দিয়ে পাশে থাকবেন ধন্যবাদ।

Leave a Comment