টেস্টোস্টেরন হরমোন কি ? টেস্টোস্টেরন পরীক্ষা কেন করা হয়? খরচ কত? টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধির উপায় কি?

আজকে আমরা টেস্টোস্টেরন হরমোন বা টেস্টোস্টেরনের পরীক্ষা নিয়ে আলোচনা করবো এবং টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধির প্রাকৃতিক উপায় নিয়ে কিছু পরামর্শ দিব।

টেস্টোস্টেরন হরমোন :

টেস্টোস্টেরন হরমোন অ্যান্ড্রোজেন নামক হরমোনের শ্রেণীর অন্তর্গত।

এটি পুরুষদের অন্ডকোষে এবং মহিলাদের ডিম্বাশয় ও অ্যাড্রিনাল গ্রন্থিতে সামান্য পরিমাণে উৎপন্ন হয়।

টেস্টোস্টেরনকে প্রাথমিকভাবে পুরুষের যৌন হরমোন হিসাবে উল্লেখ করা হয় । কারণ এটি পুরুষের যৌন বিকাশ এবং প্রজনন কার্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

টেস্টোস্টেরন বা testosterone হরমোন টেস্ট স্যাম্পল
টেস্টোস্টেরন বা testosterone হরমোন টেস্ট স্যাম্পল

এটি অনেক কম পরিমাণে মহিলাদের মধ্যেও উপস্থিত থাকে।

টেস্টোস্টেরন পরীক্ষা কেন করা হয়:

টেস্টোস্টেরন হরমোন পরীক্ষা বিভিন্ন কারণে করা হয়, কারণগুলো নিম্নে দেয়া হল:

  1. হরমোনের মাত্রা মূল্যায়ন: টেস্টোস্টেরন পরীক্ষা করার প্রাথমিক কারণ হল শরীরে রক্তে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা নির্ণয় করা। এই পরীক্ষাটি একজন ব্যক্তির বয়স এবং লিঙ্গ ভেদে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা স্বাভাবিক সীমার মধ্যে আছে কিনা তা নির্ণয় করতে সাহায্য করে
  2. হরমোনজনিত ব্যাধি নির্ণয়: টেস্টোস্টেরন পরীক্ষাগুলি টেস্টোস্টেরনের ঘাটতি বা অধিক আছে কিনা তা নির্ণয় করতে ব্যবহৃত হয়। পুরুষদের মধ্যে, টেস্টিস পর্যাপ্ত টেস্টোস্টেরন তৈরি করে না পারলে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কম হলে হাইপোগোনাডিজমের মতো অবস্থার জানান দিতে পারে। মহিলাদের ক্ষেত্রে, টেস্টোস্টেরনের মাত্রা অধিক হলে পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (PCOS) এর মতো অবস্থার সংকেত দিতে পারে।
  3. যৌন কর্মহীনতার মূল্যায়ন: টেসটোসটেরন যৌন কার্যকলাপ এ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যদি একজন ব্যক্তি যৌন কর্মহীনতার লক্ষণ অনুভব করে তাহলে টেস্টোস্টেরন পরীক্ষা করা যেতে পারে যেমন লিবিডো কমে যাওয়া, ইরেক্টাইল ডিসফাংশন বা বন্ধ্যাত্ব। কম টেস্টোস্টেরনের মাত্রা এই সমস্যাগুলিতে অবদান আছে কিনা তা এই পরীক্ষাটি সনাক্ত করতে সাহায্য করে ।
  4. বয়ঃসন্ধি-সম্পর্কিত বিষয় তদন্ত করা: কিছু ক্ষেত্রে, বয়ঃসন্ধি বিলম্বিত হতে পারে বা দ্রুত ঘটতে পারে। টেসটোসটেরন পরীক্ষা এইসকল কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে যারা বিলম্বিত বা অকাল বয়ঃসন্ধি অনুভব করছে তাদের হরমোনের মাত্রা নির্ণয় করতে সাহায্য করতে পারে। যার ফলে উপযুক্ত চিকিৎসা নিতে ডাক্তারকে সাহায্য করতে পারে।
  5. হরমোন মনিটরিং রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি: টেস্টোস্টেরনের ঘাটতি ব্যক্তিদের জন্য টেস্টোস্টেরন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (TRT) মনিটরিং করা যায়। নিয়মিত টেস্টোস্টেরন পরীক্ষাগুলি হরমোনের মাত্রা নির্ণয় করতে এবং থেরাপি কার্যকর এবং পছন্দসই থেরাপিউটিক সীমার মধ্যে আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।
  6. কিছু স্বাস্থ্যের অবস্থার পরীক্ষা করতে: টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কিছু রোগের অবস্থার জন্যে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, যেমন অস্টিওপরোসিস, পেশী নষ্ট হওয়া এবং নির্দিষ্ট ধরনের ক্যান্সার।

আরও পড়ুনঃ TSH পরীক্ষা কেন ও কোথায় করবেন? নরমাল রেঞ্জ ও খরচ কত?

টেস্টোস্টেরন হরমোন পরীক্ষা এর দাম কত?

টেস্টোস্টেরন হরমোন পরীক্ষা এর দাম অঞ্চল ভেদে বা ডায়গনস্টিক সেন্টার ভেদে কম বেশি হয়ে থাকে।

নিম্নে টেস্টোস্টেরন হরমোন পরীক্ষা এর দাম দেয়া হল:

পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের টেস্টোস্টেরন হরমোন পরীক্ষা এর দাম ১২০০ টাকা

সরকারি ভাবে টেস্টোস্টেরন হরমোন পরীক্ষা এর দাম ৪০০ টাকা।

টেস্টোস্টেরন হরমোন পরীক্ষা করতে কি স্যাম্পল লাগে?

টেস্টোস্টেরন হরমোন পরীক্ষা করতে রেড টিউব (red tube) এ সিরাম (সিরাম ) স্যাম্পল লাগে।

টেস্টোস্টেরন হরমোন পরীক্ষা রিপোর্ট ডেলিভারি সময়:

টেস্টোস্টেরন হরমোন পরীক্ষা করতে কিছু মেশিন এ ১৭ মিনিট আবার কিছু মেশিন এ ৩৫-৪৫ মিনিট সময় লাগে

তবে ম্যানুয়ালি করতে ২ ঘন্টার মত সময় লাগে।
হরমোন টেস্ট গুলি সাধারণত সময় সাপেক্ষ হয়ে থাকে।

  • আর্জেন্ট রিপোর্ট ডেলিভারি সময় ৩-৪ ঘণ্টা।
  • নরমাল রিপোর্ট ডেলিভরি সময় ৭-৮ ঘণ্টা।

আরও পড়ুনঃ HBsAG test কি ও কেন করা হয়? HBsAG test positive মানে কি? HBsAG test এর খরচ কত?

টেস্টোস্টেরন হরমোন নরমাল :

টেস্টোস্টেরন বা testosterone হরমোন রিপোর্ট

বয়স বা লিঙ্গ ভেদে টেস্টোস্টেরন হরমোন কম বেশি হয়ে থাকে নিম্নে নরমাল লেভেল দেয়া হল।

পুরুষদের ক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরন হরমোন:

  • ০১-০৯ বছর: < ০০.৩৪৬ nmol/L
  • ১০-১১ বছর : ০০.৬২ থেকে ০৩.৪৬ nmol/L
  • ১২-১৫ বছর : ০৩.৪৬ থেকে ১১.০০ nmol/L
  • ১৬-১৯ বছর : ০৬.৯৩ থেকে ২১.৪৯ nmol/L
  • ২০-৫০ বছর : ১০.৪০ থেকে ৩৫.৭১ nmol/L

মহিলাদের ক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরন হরমোন :

  • ০১-০৯ বছর: ০০.০০ থেকে ০০.৩৪৬ nmol/L
  • ১০-১১ বছর : ০০.৫২ থেকে ০০.৬৯ nmol/L
  • ১২-১৫ বছর : ০০.৬৯ থেকে ০১.২১ nmol/L
  • ১৬-১৯ বছর : ০০.৬৯ থেকে ০১.৩১ nmol/L
  • ২০-৫০ বছর : ০০.৩৫ থেকে ০২.৭০ nmol/L

টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধির প্রাকৃতিক উপায় :

আপনি যদি স্বাভাবিকভাবে আপনার টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়াতে চান তবে এখানে কিছু কৌশল রয়েছে যা আপনি চেষ্টা করতে পারেন:

  1. স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখুন: অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমাতে পারে। সুষম খাদ্য , নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে অতিরিক্ত ওজন কমাতে এবং টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করতে পারে।
  2. নিয়মিত ব্যায়াম করুন: নিয়মিত শারীরিক কার্যক্রম, বিশেষ করে ওয়েট ট্রেনিং এবং উচ্চ-তীব্রতার ব্যবধান প্রশিক্ষণ (HIIT) এর সাথে টেসটোস্টেরনের মাত্রা বাড়াতে দেখা গেছে। সপ্তাহের বেশিরভাগ দিন কমপক্ষে 30 মিনিটের মধ্যম থেকে অধিক ব্যায়ামের করতে হবে।
  3. পর্যাপ্ত ঘুম : অপর্যাপ্ত ঘুম টেস্টোস্টেরন সহ হরমোনের উৎপাদনকে খারাপ দিকে নিতে পারে। প্রতি রাতে 7-8 ঘন্টা মানসম্পন্ন ঘুম স্বাস্থ্যকর টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বজায় রাখেতে সাহায্য করে।
  4. স্ট্রেস লেভেল ম্যানেজ করুন: ক্রনিক স্ট্রেস কর্টিসলের উৎপাদন বাড়াতে পারে, যা টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমাতে পারে। স্ট্রেসকে ম্যানেজ করার জন্য স্বাস্থ্যকর উপায়গুলি খুঁজুন, যেমন মেডিটেশন অনুশীলন করা, পছন্দের কাজে জড়িত হওয়া । বন্ধু এবং পরিবারের সাথে সময় দিন।
  5. একটি সুষম খাদ্য বজায় রাখুন: টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধির জন্য কিছু পুষ্টি কর খাদ্য অপরিহার্য। জিঙ্ক সমৃদ্ধ খাবার তালিকায় যুক্ত করুন (যেমন, ঝিনুক, গরুর মাংস, কুমড়ার বীজ), ম্যাগনেসিয়াম (যেমন, গাঢ় শাক, বাদাম, বীজ), ভিটামিন ডি (যেমন, চর্বিযুক্ত মাছ, দুর্গযুক্ত দুগ্ধজাত পণ্য), এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি (যেমন, অ্যাভোকাডোস, আপনার খাদ্যতালিকায় জলপাই তেল, বাদাম)।
  6. অ্যালকোহল সেবন না করা: অত্যধিক অ্যালকোহল গ্রহণের কারণে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কম হওয়ার ঝুকি রয়েছে। তাই আপনার অ্যালকোহল সেবন সীমিত করুন বা সম্ভব হলে পুরোপুরি বন্ধ করুন।
  7. পর্যাপ্ত ভিটামিন এবং খনিজ গ্রহণ : টেস্টোস্টেরন উত্পাদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টির ঘাটতি হলে মাল্টিভিটামিন বা নির্দিষ্ট পরিপূরক ডাক্তার এর পরামর্শ নিয়ে গ্রহণের করা যেতে পারে।
  8. ইস্ট্রোজেনের মতো যৌগগুলির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন : প্লাস্টিক, কীটনাশক এবং ব্যক্তিগত বিভিন্ন ক্রিম পণ্যগুলিতে পাওয়া কিছু রাসায়নিক শরীরে ইস্ট্রোজেনের মান বাড়াতে পারে এবং হরমোনের ভারসাম্য ব্যাহত করতে পারে। সম্ভব হলে কাচের পাত্র, জৈব পণ্য এবং প্রাকৃতিক ব্যক্তিগত ক্রিম বেছে নিন।
  9. খাবার এড়িয়ে যাবেন না বা অতিরিক্ত ডায়েট করবেন না: অতিরিক্ত ডায়েট করা বা খাবার বাদ দিলে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে যেতে পারে। আপনি হরমোন উত্পাদন বৃদ্ধি করার জন্য পর্যাপ্ত ক্যালোরি এবং পুষ্টি গ্রহণ করছেন কিনা তা নিশ্চিত করুন।
  10. ডাক্তার এর সাথে পরামর্শ করুন: আপনার যদি কম টেস্টোস্টেরনের মাত্রা উপলব্ধি হয় তবে একজন ডাক্তার এর সাথে পরামর্শ করা ভাল। ডাক্তার টেস্টোস্টেরনের এর পরীক্ষা দিতে পারে এবং ব্যক্তিগত পরামর্শ দিতে পারে বা প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ হতে সাহায্য করতে পারেন ।

আরও পড়ুনঃ vdrl test কি?vdrl test কেন করা হয়? vdrl test পজিটিভ মানে কি?vdrl test price in bangladesh?

আজকের পোষ্ট টি ভালো লাগলে এবং উপকারি মনে হলে অবশ্যই বন্ধু দের সাথে শেয়ার করতে পারেন যাদের জন্য উপকার হবে বলে মনে হয়। আমদের পেজটিতে oviggobd ফলো করতে ভুলবেন না। সবার সুসাস্থ কামনা করি।

৬ thoughts on “টেস্টোস্টেরন হরমোন কি ? টেস্টোস্টেরন পরীক্ষা কেন করা হয়? খরচ কত? টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধির উপায় কি?”

  1. টেস্টেস্টেরন হরমোন টেস্টের জন্য কোন টেস্ট করাবো। একটি ডায়াগনস্টিক বলল দুটি টেস্ট আাছে কোনটি করাবেন। কনফিউজড হয়ে গেলাম। পরামর্শ আশা করছি।
    ৫৫ বতসর পরবতী টেস্টেস্টেরন লেভেল কত থাক উচিত।
    টেস্টেস্টেরন হরমোন লেভেল পুরোমাত্রায় কমে গেলে সুষম খাদ্যগ্রহনের মাধ্যমে আার বাড়ানো যায় কি? নাকি হরমোন ইনজেকশন নিতে হবে।
    সবগুলো উত্তর আাশা করছি।

    Reply
    • আসলে আপনি টেস্ট সম্পর্কে অভিজ্ঞ না হলে নিজে থেকে টেস্ট করিয়ে লাভ নেই।তাই ডাক্তার এর পরামর্শ অনুযায়ী testosterone অথবা free testosterone টেস্ট করাতে পারেন। আমাদের পোস্ট এ বয়স অনুযায়ী নরমাল ভ্যালু দেয়া আছে । খাবার এবং প্রতিনিয়ত শারীর চর্চার মাধ্যমে সভাভাবিক লেভেল এ আনা যায় ।তবে বয়স এর সাথে সাথে টেস্টোস্টেরন লেভেল কমতে থাকে। এর যেকোনো ওষুধ অথবা ইনজেকশন নিতে হলে ডাক্তার এর পরামর্শ অনুযায়ী নিতে হবে।আশা করছি সবগুলি উত্তর পেয়েছেন ধন্যবাদ।

      Reply

Leave a Comment