serum albumin কি এবং কেন করা হয়? টেস্ট সম্পর্কিত সকল তথ্য একই পোস্ট এ।

আজকে আমরা আলোচনা করব serum albumin টেস্ট নিয়ে। এই টেস্ট কি ও কেন করা হয় ,টেস্ট এর প্রিপারেশন,দাম কত, রিপোর্ট ডেলিভারি সময় ইত্যাদি। এছড়াও আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে আজকের পোস্ট এ।

serum albumin কি?

serum albumin মানুষের রক্তের প্লাজমাতে সব থেকে বেশি পরিমাণে থাকে, যা বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কার্যাবলী বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি প্রাথমিকভাবে লিভার দ্বারা উৎপাদিত হয় এবং টোটাল প্লাজমা প্রোটিন এর  প্রায় 55-60% অংশ  serum albumin থাকে।

Serum albumin টেস্ট কেন করা হয় ?

ডাক্তাররা নিয়মিত রক্ত পরীক্ষার অংশ হিসাবে সিরাম অ্যালবুমিন মাত্রা পরিমাপ করার পরামর্শ দেন কারণ সিরাম অ্যালবুমিন একজন রোগীর  স্বাস্থ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক, বিশেষ করে লিভারের কার্যকারিতা, কিডনির কার্যকারিতা এবং শরীরের ফ্লুইড নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা সম্পর্কিত ভারসাম্য রক্ষা করে থাকে।

serum albumin কি এবং কেন করা হয়?
serum albumin কি এবং কেন করা হয়?

 1. লিভারের কার্যকারিতার নির্ণয় :

 সিরাম অ্যালবুমিন প্রাথমিকভাবে লিভার দ্বারা তৈরী হয়, তাই এর স্তরগুলি লিভারের স্বাস্থ্য সম্পর্কে মূল্যবান ধারণা  প্রদান করে থাকে । নিম্ন অ্যালবুমিনের মাত্রা লিভারের কর্মহীনতা বা ক্ষতির ইঙ্গিত দিতে পারে, এমন কিছু অবস্থা:

 – লিভার সিরোসিস

 – হেপাটাইটিস

 – লিভার ক্যান্সার

 যখন লিভারের অ্যালবুমিন উৎপাদনের ক্ষমতার সাথে আপোস করা হয়, তখন হাইপোঅ্যালবুমিনেমিয়া হতে পারে (কম অ্যালবুমিনের মাত্রা), যা প্রায়ই দীর্ঘস্থায়ী লিভারের রোগে দেখা যায়।

2. পুষ্টি নির্ণয় :

 অ্যালবুমিনের মাত্রা প্রায়ই একজন ব্যক্তির পুষ্টির অবস্থা নির্ণয় করতে ব্যবহৃত হয়, বিশেষ করে যারা অপুষ্টিতে ভুগছেন বা প্রোটিনের ঘাটতি আছে তাদের ক্ষেত্রে। শরীরে অ্যালবুমিনের মাত্রা কম হলে দুর্বল প্রোটিন গ্রহণ বা শোষণ নির্দেশ করতে পারে, যা হতে পারে:

 – অপুষ্টি বা অনাহার

 – দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা (যেমন, ক্যান্সার, HIV/AIDS)

 – ম্যালাবসর্পশন ডিজঅর্ডার (যেমন, ক্রোনস ডিজিজ, সিলিয়াক ডিজিজ)

রোগীদের পুষ্টির চাহিদা মূল্যায়নের জন্য অ্যালবুমিন পর্যবেক্ষণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 3. কিডনি রোগ নির্ণয় এবং পর্যবেক্ষণ:

 কিডনি রোগে, বিশেষ করে নেফ্রোটিক সিন্ড্রোমের মতো পরিস্থিতিতে, কিডনি রক্তে অ্যালবুমিন ধরে রাখার ক্ষমতা হারাতে পারে, যার ফলে প্রস্রাবে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে অ্যালবুমিন নির্গত হয় (অ্যালবুমিনুরিয়া)। সিরাম অ্যালবুমিন পরিমাপ করা এই ধরনের অবস্থার নির্ণয় করতে সাহায্য করে, কারণ নিম্ন মাত্রা কিডনির কার্যকারিতাকে ইঙ্গিত করতে পারে।

4. প্রদাহ এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগ পর্যবেক্ষণ:

 প্রদাহ বা দীর্ঘস্থায়ী রোগের প্রতিক্রিয়ায় সিরাম অ্যালবুমিনের মাত্রা প্রায়ই কমে যায়। এটি একটি “নেগেটিভ অ্যাকিউট-ফেজ রিঅ্যাক্ট্যান্ট” হিসাবে পরিচিত, যার অর্থ সংক্রমণ বা দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার সময় (যেমন ক্যান্সার, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, বা হার্ট ফেইলিওর) শরীরের প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়ার অংশ হিসাবে অ্যালবুমিন উৎপাদন কমে  যায়। অতএব, ডাক্তাররা রোগের অগ্রগতি বা চিকিৎসার জন্য শরীরের প্রতিক্রিয়া নির্ণয় করতে অ্যালবুমিন পরীক্ষা দিতে পারেন।

5. তরল ভারসাম্যের :

 অ্যালবুমিন অনকোটিক প্রেসার (যে শক্তি রক্তনালীর ভিতরে তরল রাখে) বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সিরাম অ্যালবুমিনের নিম্ন স্তরের ফলে টিস্যুতে তরল ফুটতে পারে, যার ফলে শোথ (ফোলা) হতে পারে, বিশেষ করে পা, পেটে (জলপাতা) এবং ফুসফুসে (প্লুরাল ইফিউশন)। তরল ভারসাম্যহীনতায় হাইপোঅ্যালবুমিনেমিয়া অবদান রাখছে কিনা তা নির্ধারণ করতে অস্বাভাবিক ফোলা রোগীদের অ্যালবুমিনের মাত্রা পরীক্ষা করতে দিতে পারেন চিকিৎসকরা।

6. প্রি-সার্জিক্যাল বা প্রাক-চিকিৎসা :

 সিরাম অ্যালবুমিনের মাত্রা প্রায়ই সার্জারি বা বড় চিকিৎসার আগে পরীক্ষা করা হয়, বিশেষ করে গুরুতর অসুস্থ বা বয়স্ক রোগীদের ক্ষেত্রে। অ্যালবুমিনের মাত্রা কম হলে  সার্জারি করার পরে শেরে ওঠার সম্ভাবনা, জটিলতার ঝুঁকি বা ক্ষত নিরাময়ে বিলম্বিত হওয়ার লক্ষণ হতে পারে। অস্ত্রোপচারের জন্য রোগীর প্রস্তুতি নির্ণয় এর এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ টেস্ট হতে পারে ।

7. গুরুতর অসুস্থতা এবং নিবিড় পরিচর্যা পর্যবেক্ষণ:

 গুরুতর অসুস্থ রোগীদের মধ্যে, সিরাম অ্যালবুমিনের মাত্রা একটি গুরুত্বপূর্ণ মার্কার। কম অ্যালবুমিনের মাত্রা সেপসিস, ট্রমা বা বড় অপারেশন এর পরে খারাপ ফলাফল নির্দেশ করতে পারে। অ্যালবুমিন পর্যবেক্ষণ করা রোগীর ফলাফল উন্নত করতে পুষ্টি এবং থেরাপিউটিক কার্যক্রম সামঞ্জস্য করতে সাহায্য করে।

সাধারণ অবস্থা যেখানে সিরাম অ্যালবুমিন পর্যবেক্ষণ করা হয়:

  1.  সিরোসিস
  2.  দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ (CKD)
  3.  নেফ্রোটিক সিনড্রোম
  4.  হার্ট ফেইলিওর
  5.  গুরুতর সংক্রমণ (যেমন, সেপসিস)
  6.  পোড়ার আঘাত
  7.  ক্যান্সার
  8.  অস্ত্রোপচার পরবর্তী পুনরুদ্ধার

আরও পড়ুনঃ bilirubin test কেন করা হয়? বিলিরুবিন নরমাল কত, খরচ কত? বিলিরুবিন বেড়ে বা কমে গেলে কি হয়? || bilirubin test details.

Serum albumin test এর দাম কত?

সিরাম albumin টেস্ট এর দাম অঞ্চল ভেদে এবং হাসপাতাল ভেদে কম বেশি হতে পারে। তবে ধারণা পাবার জন্য আমরা পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের এবং সরকারি হাসপাতাল এর দাম দিচ্ছি ।

পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার হেড অফিস এর মূল্য

Serum Albumin 600 BDT।

লাস্ট আপডেট ০৭/১০/২০২৪

সরকারি ভাবে টেস্ট করাতে কিছু কম খরচ হয়।

২০২০ সনের টেস্ট এর দাম অনুযায়ী দেয়া হল

সরকারি হাসপাতালে Serum albumin 75 BDT ।

প্রস্তুতি:

এই টেস্ট এর জন্য বিশেষ কোন প্রিপারেশন থাকে না । আপনি যখন তখন করতে পারবেন তারপরও কিছু বিষয় জেনে নিতে পারেন যেমন –

ঔষধ:

– কিছু ওষুধ অ্যালবুমিনের মাত্রাকে প্রভাবিত করতে পারে, তাই আপনার ডাক্তারকে যেকোনো প্রেসক্রিপশন বা ওভার-দ্য-কাউন্টার ওষুধ বা আপনি যে ওষুধ গ্রহণ করছেন সে সম্পর্কে জানানো দরকার। অ্যালবামিনের মাত্রা প্রভাবিত করতে পারে এমন সাধারণ ওষুধগুলির মধ্যে রয়েছে:

 – স্টেরয়েড

 – ইনসুলিন

 – জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি

 – হরমোনাল চিকিৎসা

 – আপনার ওষুধের উপর নির্ভর করে, আপনার ডাক্তার আপনাকে সঠিক রিডিং পেতে পরীক্ষার আগে কিছু ওষুধ বন্ধ বা সামঞ্জস্য করতে বলতে পারেন।

সাম্প্রতিক স্বাস্থ্য:

 – আপনি যদি সম্প্রতি অসুস্থ হয়ে থাকেন,  উল্লেখযোগ্য সংক্রমণ, ট্রমা বা অস্ত্রোপচার করা হয়, তাহলে আপনার ডাক্তারকে জানানো উচিৎ। এই কারণগুলি আপনার অ্যালবামিনের মাত্রাকে প্রভাবিত করতে পারে।

ভারী ব্যায়াম এড়িয়ে চলুন:

 – পরীক্ষার ঠিক আগে তীব্র শারীরিক কার্যকলাপ রক্তে প্রোটিনের মাত্রা প্রভাবিত করতে পারে। পরীক্ষার দিনে কঠোর ব্যায়াম এড়াতে ভাল।

আরও পড়ুনঃ alkaline phosphatase test কেন করা হয়? টেস্ট এর খরচ,প্রস্তুতি, স্যাম্পল কালেকশন ও ডেলিভারি সময় সকল কিছু জেনে নিন।

স্যাম্পল সংগ্রহ:

এই টেস্ট টি করবার জন্যে রেড টিউব দরকার হয়। টেস্ট করার জন্য সিরাম লাগবে। ব্লাড সংগ্রহ করবার পরে সেটিকে ক্লট হবার জন্য কিছু সময় দেয়া হয় । তার পরে সেন্ট্রিফিউজ করে ল্যাব এ পাঠানো হয়।

পরীক্ষা পদ্ধতি :

এখন বেশির ভাগ ল্যাব গুলিতেই অটো এনালাইজার ব্যবহার করা হয়। এই টেস্ট করতে বেশি সময় লাগে না, অটো মেশিন গুলিতে ১৫-২০ মিনিট এর মধ্যেই ফলাফল পাওয়া যায়। তবে রেজাল্ট কম বেশি হলে রি-চেক দিয়ে ছাড়া হয়।

Normal Serum Albumin Range for Adults:

  • 3.5 to 5.0 g/dL (grams per deciliter)

অটো মেশিন আমাদের অধিকাংশ ল্যাব গুলিতে ব্যবহৃত হয় :

  • Beckman coulter 480
  • Dimension Rxl max
  • Vitros 5600
  • Vitros 350
  • Cobas 6000

Etc.

এছাড়াও উন্নত মানের ল্যাব গুলিতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মেশিন এর সাহায্যে করা হয়ে থাকে।

রিপোর্ট ডেলিভারি সময়:

এই টেস্ট টি  করতে  কম সময় লেগে থাকে । তাই বড় হাসপাতাল বা ল্যাব গুলিতে অল্প সময় এর মধ্যেই ফলাফল পাওয়া যায়। গ্রামের ছোট ল্যাব গুলি শহর বা বিভাগীয় ডায়াগনস্টিক থেকে টেস্ট করিয়ে আনে ।

আর্জেন্ট রিপোর্ট ডেলিভারি সময়: ২-৩ ঘণ্টা

রেগুলার রিপোর্ট ডেলিভারি সময়: ১দিন ।

রিপোর্ট ডেলিভারি সময় হাসপাতাল এর নিয়ম অনুযায়ী   দিয়ে থাকে, তাই টেস্ট এর রিপোর্ট ডেলিভারি সময় তারতম্য হতে পারে।

উপসংহার:

সিরাম অ্যালবুমিন পরীক্ষা একজন রোগীর লিভার এবং কিডনির কার্যকারিতা, পুষ্টির অবস্থা এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে। এটি বিভিন্ন চিকিৎসা শর্ত নির্ণয়, রোগের অগ্রগতি  এবং চিকিৎসার প্রতিক্রিয়া নির্ণয়ে সহায়তা করে। যকৃতের রোগ, কিডনি রোগ, অপুষ্টি, বা প্রদাহের জন্যই হোক না কেন, সিরাম অ্যালবুমিনের মাত্রা ডাক্তারদেরকে অবহিত করলে, ক্লিনিকাল সিদ্ধান্ত নিতে এবং রোগীর সমস্যা অপ্টিমাইজ করতে সাহায্য করে থাকে।

আজকের পোস্ট এই পর্যন্তই আমাদের পোস্ট ভালো লাগলে অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজ oviggobd তে লাইক দিয়ে একটিভ থাকুন। তাহলে নতুন টেস্ট। সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পারবেন ধন্যবাদ।

Leave a Comment