কেমন আছেন সবাই আজকে আমরা বায়োপসি নিয়ে আলোচনা করবো।কেন এটি করা হয়,কেন ডাক্তার এডভাইস করেন।সকল বিষয়ে নিয়ে আলোচনা করা হবে।
তো চলুন শুরু করা যাক ।
বায়োপসি কি?
বায়োপসি হল মূলত একটি চিকিৎসা পদ্ধতি যেখানে পরীক্ষা এবং বিশ্লেষণের জন্য একজন রোগীর শরীর থেকে টিস্যু বা কোষের নমুনা নেয়া হয়। বায়োপসির প্রধান উদ্দেশ্য হল রোগের উপস্থিতি নির্ণয় করা, বিশেষ করে ক্যান্সার এবং অস্বাভাবিক টিস্যুগুলির প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্যগুলি নির্ণয় করা। সঠিক রোগ নির্ণয় করতে এবং উপযুক্ত চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরি করার জন্য এটি একটি অপরিহার্য পদ্ধতি।
বায়োপসি কত প্রকার হতে পারে:
বিভিন্ন ধরণের বায়োপসি রয়েছে, প্রতিটি লক্ষণের উপরে নির্ভর করে নির্দিষ্ট স্থানের জন্য বায়োপসি দেয়া হয়।আমরা কিছু নাম উল্লেখ্য করছি:
- Needle Biopsy: টিস্যু বা কোষের একটি ছোট নমুনা বের করতে একটি পাতলা সুই ব্যবহার করা হয়।
- Surgical Biopsy: একটি আরও বিস্তৃত পদ্ধতি যেখানে একজন সার্জন একটি ছোট অপারেশনের সময় একটি অংশ বা সম্পূর্ণ সন্দেহজনক টিস্যু অপসারণ করে। এটি
করা হয় যখন অস্বাভাবিক অঙ্গ শরীরের গভীরে থাকে বা যখন রোগ নির্ণয় করার জন্য একটি বড় নমুনা দরকার হয়। - Endoscopic Biopsy: একটি এন্ডোস্কোপ, একটি নমনীয় টিউব যার মাথায় একটি ক্যামেরা থাকে, যার মাদ্ধমে (যেমন, পরিপাকতন্ত্র, শ্বাসতন্ত্র) অঙ্গ বা টিস্যু থেকে নমুনা অ্যাক্সেস করতে এবং নিতে ব্যবহৃত হয়।
- Bone Marrow Biopsy: রক্ত-গঠনকারী কোষগুলি পরীক্ষা করার জন্য হিপবোন থেকে অল্প পরিমাণে অস্থিমজ্জা নেয়া হয় , সাধারণত রক্ত-সম্পর্কিত ব্যাধি নির্ণয় করতে এটি ব্যবহৃত হয়।
- Skin Biopsy: ত্বকের অবস্থা নির্ণয় করতে এটি ব্যাবহার করা হয় এবং ত্বকের একটি ছোট টুকরো অপসারণ করা হয়।
আলোচ্য বিষয়বলি
বায়োপসি টেস্ট কেন করা হয়:
একজন ডাক্তার একটি বায়োপসির পরামর্শ দিতে পারেন তার মধ্যে রয়েছে:
- টিউমার: যখন একজন ডাক্তার শারীরিক বা ইমেজিং পরীক্ষার সময় (যেমন এক্স-রে, আল্ট্রাসাউন্ড, বা এমআরআই) একটি অস্বাভাবিক পিণ্ড চিহ্নিত করেন, তখন তারা বায়োপসি করতে দিতে পারেন যেন টিউমার টি ভালো নাকি খারাপ সেটা বুঝার জন্যে benign (ক্যান্সার মুক্ত) বা ম্যালিগন্যান্ট(malignant)( মানে ক্যান্সারযুক্ত)।
- অস্বাভাবিক পরীক্ষার ফলাফল: যদি একজন রোগীর রক্ত পরীক্ষা, প্যাপ স্মিয়ার বা অন্যান্য ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা অস্বাভাবিক ফলাফল পাওয়া যায়, তাহলে শরীরে ভিতরের অবস্থার আরও তদন্ত এবং নিশ্চিত করার জন্য একটি বায়োপসি করতে হতে পারে।
- ব্যাখ্যাতীত উপসর্গ: যে ক্ষেত্রে রোগীর সমস্যা দেখা দেয় কিন্তু নির্দিষ্ট কারন খুজে পাওয়া যায় না বা অব্যক্ত উপসর্গ দেখা দেয়, সেখানে একটি বায়োপসি কারণ শনাক্ত করতে এবং উপযুক্ত চিকিৎসার পদ্ধতি দিতে সাহায্য করতে পারে।
- রোগের অগ্রগতি নিরীক্ষণ করা: রোগের অগ্রগতি মূল্যায়ন বা চলমান চিকিৎসার কার্যকারিতা নির্ণয়ের জন্য একটি বায়োপসি করার পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে।
- ক্যান্সারের জন্য স্ক্রিনিং: কিছু পরিস্থিতিতে, যেমন উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি বা নির্দিষ্ট বয়সের, প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার সনাক্ত করার জন্য স্ক্রীনিং বায়োপসি করা যেতে পারে ।
- সংক্রমণ নির্ণয়: বায়োপসি কিছু সংক্রামক রোগ নির্ণয় করতে সাহায্য করতে পারে যা টিস্যু বা অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করতে পারে, বিশেষ করে এমন ক্ষেত্রে যেখানে অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতিগুলিতে কিছু পাওয়া যায় না ।
- অঙ্গের কার্যকারিতা নির্ণয়:রোগীর লিভার বা কিডনির মতো নির্দিষ্ট অঙ্গগুলির কার্যকারিতা নির্ণয় করার জন্য একটি বায়োপসি করা যেতে পারে ।
- প্রদাহজনক অবস্থার তদন্ত করা: বায়োপসি নির্দিষ্ট প্রদাহজনক বা অটোইমিউন ডিসঅর্ডারগুলির তীব্রতা নির্ণয় এবং নির্ধারণ করতে সাহায্য করে।
বায়োপসি টেস্ট কত টাকা বাংলাদেশের :
ডাক্তার, ডায়াগনস্টিক সেন্টার,গ্রাম বা শহর ভেদে এই বায়োপসি এর খরচ কম বেশি হয়ে থাকে।
ভালো ডাক্তার বা হাসপাতাল অনেক সময় তাদের কর্ম দক্ষতা অনুযায়ী দাম বেশি নিতে পারে।
প্রাইভেট হসপিটাল এই পদ্ধতির খরচ ৩ হাজার থেকে তার উপরে হতে পারে।
তবে এটি নির্ভর করে কোন বায়োপসি করা হচ্ছে তার উপরে।
সরকারি হসপিটাল এ তুলনমূলকভাবে কম খরচ পড়ে।
তবে আপনার টাকা থাকলে ভালো জায়গায় থেকে করা উচিৎ।
আবার প্রাইভেট হসপিটাল মানেই যে সব ভালো হবে তাও না। ভালো ডাক্তার এবং হসপিটল দুইটাই নির্ভর করে।
বায়োপসি রিপোর্ট ডেলিভারি সময়:
এই পদ্ধতি সময় সাপেক্ষ তাই ডাক্তার এর উপরে নির্ভর করে । যেই টিসু টি নেয়া হয় বা সেই স্থানের অবস্থার একটি ডকুমেন্ট তৈরি করে দেয়া হয়। যেই পরবর্তী চিকিৎসা পদ্ধতিতে কাজে আসে।
এটি নির্দিষ্ট সময় হাসপাতাল কতৃপক্ষের উপরে নির্ভর করে।
বায়োপসি এর পরে স্যাম্পল সংরক্ষণ:
বায়োপসি করবার পরে সেই অঙ্গ টি অবশ্যই সতর্কতার সাথে সংগ্রহ করা উচিৎ কারণ পরবর্তী histopathology টেস্ট করতে দরকার হয়।এটি রোগী হিসাবে আপনাদেরও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে । কারণ এটি নষ্ট হয়ে গেলে আবার পাবেন না।
ফিক্সেটিভ 10% বাফারযুক্ত ফরমালিন সাধারণত অনেক ল্যাবে হিস্টোলজির জন্য টিস্যু সংরক্ষণ করতে ব্যবহৃত করা হয়।
উপসংহার:
বায়োপসি একটি গুরুত্বপূর্ন এবং খরচ সাপেক্ষ পদ্ধতি তাই এই পরীক্ষার করবার আগে সব কিছু ভেবে চিনতে করতে হবে। ভালো ডাক্তার ভালো হসপিটাল অবশ্যই দেখা উচিৎ। আর ভয় পাবার কিছু নেই কারণ এই টেস্ট এর মাধ্যমে আপনার বর্ধিত টিসু ক্ষতির কারণ নাকি ভালো সেটি যাচাই করা যায়।
আজকের পোস্ট এই পর্যন্তই।আমাদের পোস্ট ভালো লাগলে অবশ্যই আমদের পোস্ট share করে অন্যদের উপকার করতে পারবেন।
নতুন পোস্ট এর আপডেট পেতে অবশ্যই আমাদের পেজ oviggobd তে লাইক দিতে পারেন ।
সময় নিয়ে পোস্ট পড়বার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
নতুন কিছু শিখতে চাই এবং সেখাতে চাই । অনভিজ্ঞও থেকে আপনিও হয়ে উঠুন অভিজ্ঞ।