bilirubin test কেন করা হয়? বিলিরুবিন নরমাল কত, খরচ কত? বিলিরুবিন বেড়ে বা কমে গেলে কি হয়? || bilirubin test details.

bilirubin test ডাক্তার অনেক সময় এডভাইস করে থাকেন। বিলিরুবিন টেস্ট কেন করা হয় বা কত হলে শরীরে সেটি সাভাবিক। সেই সকল বিষয় নিয়ে আজকে আলোচনা করা হবে এই পোষ্টে।

bilirubin test কি ?

bilirubin test যা রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা পরিমাপ করতে ব্যবহৃত হয়। বিলিরুবিন হল একটি হলুদ রঞ্জক যা শরীরের লোহিত রক্তকণিকার স্বাভাবিক ভাঙ্গনের সময় তৈরি হয়। এটি লিভার দ্বারা তৈরী হয় এবং পিত্তে নির্গত হয়, যা পাচনতন্ত্রের মাধ্যমে শরীর থেকে বাইরে নির্গত হয়।

রক্তে বিভিন্ন ধরণের bilirubin:

Total bilirubin : এটি indirect (পরোক্ষ) এবং direct (প্রত্যক্ষ) বিলিরুবিন উভয়েরই মিলিত মোট পরিমাপ করে।
নরমাল মাত্রা :

  • Adult : 0.30 – 1.00 mg/dl
  • Neonate : 0.60 – 10.50 mg/dl.
bilirubin test report
bilirubin test report

Unconjugated (indirect) bilirubin: Unconjugated বা indirect বিলিরুবিনের একটি রূপ যেটি এখনও লিভার দ্বারা প্রক্রিয়া হয়নি।

Conjugated (direct) bilirubin: Conjugated বা direct বিলিরুবিনের একটি রূপ যা লিভার দ্বারা প্রক্রিয়া করা হয়েছে এবং শরীর থেকে বেরিয়ে যেতে প্রস্তুত।

নরমাল মাত্রা :

  • UpTo 0.60 mg/dl ( 0.60 পর্যন্ত নরমাল)

bilirubin test কেন করা হয়?

বিলিরুবিন পরীক্ষাটি প্রাথমিকভাবে লিভারের কার্যকারিতা নির্ণয় করতে এবং লিভারের বিভিন্ন ব্যাধি নির্ণয় করতে ব্যবহৃত হয়। এটি জন্ডিস, লিভারের রোগ এবং নির্দিষ্ট ধরণের রক্তস্বল্পতার মতো অবস্থা নির্ণয় করতে করা হয়।

রক্তে বিলিরুবিনের উচ্চ ফলাফল লিভারের সমস্যা যেমন হেপাটাইটিস, সিরোসিস বা লিভারের ক্ষতি সনাক্ত করতে পারে। এটি অন্যান্য রোগের লক্ষণও হতে পারে, যেমন পিত্তথলির পাথর বা নির্দিষ্ট রক্তের ব্যাধি।

তবে যদি রোগ সক্রান্ত কোন সমস্য বা লক্ষণ অনুভব করেন তাহলে ডাক্তার এর কাছে পরামর্শ নিয়ে ,যদি ডাক্তার আপনাকে এই পরীক্ষা দেয় সেই ক্ষেত্রে আপনি এই টেস্ট টি করতে পারেন।

আরও পড়ুনঃ CRP test কি? CRP test কেন করা হয়? খরচ কত? CRP বেশি হলে কি হয়?

bilirubin test এর দাম কত – bilirubin test price in bangladesh :

বিলিরুবিন টেস্ট এর দাম বা বিলিরুবিন ডাইরেক্ট, ইন ডাইরেক্ট এর দাম অঞ্চল ভেদে কিছু কম বেশি হয় । তবে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যাবহৃত মেশিন বা রিয়াজেন্ট এর উপরে ভিত্তি করে দাম কম বেশি হতে পারে। সময় এর সাথে দাম বেড়ে যেতে পারে তাই ধারণা পাবার জন্য আমরা পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে দাম দিচ্ছি।

বিলিরুবিন টেস্ট এর দাম পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে 2023 আপডেট টেস্ট প্রাইস –

  • Bilirubin (Total) : 400 টাকা
  • Bilirubin (direct/Indirect) : 500 টাকা
  • Urine for Bilirubin: 300 টাকা

সরকারি হসপিটাল বিলিরুবিন টেস্ট এর দাম 60 টাকা ২০২০ এর দাম অনুযায়ী।

bilirubin test preparation বা প্রস্তুতি:

এই টেস্ট করবার জন্য স্পেশাল প্রিপারেশন নেই। তবে সাভাবিক যেই সকল বিষয় মাথায় রাখতে হবে সেটি হল ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হবে রক্ত দেবার জন্যে, আর যদি জন্ডিস রোগ এর ট্রিটমেন্ট চলে তাহলে ডাক্তার এর পরামর্শ নেয়া উচিৎ।

bilirubin test এর সম্পল কালেকশন:

bilirubin test করতে রেড টিউব (red tube )সিরাম (serum) স্যাম্পল লাগবে ।

bilirubin test sample tube

 

Urine for bilirubin আবার স্যাম্পল হিসাবে প্রসাব (urine) লাগবে।

আরও পড়ুনঃ ra test কি এবং কেন করা হয় ? নরমাল কত,খরচ কত? ra test details in bangla.

 

bilirubin test এর রিপোর্ট ডেলিভারি সময়:

bilirubin test একটি বায়োকেমিক্যাল টেস্ট। এটি করতে মেশিন এ খুবই কম সময় লাগে। অটো মেশিন গুলিতে ১০-১৫ মিনিট সময় লাগে। যেমন vitros 350,vitros 5600, Beckman coulter 480, Dimension RxL max,Cobas 501 ইত্যাদি।

তবে ছোট ল্যাব বা হসপিটাল গুলিতে ম্যানুয়াল টেস্ট গুলিতে একটু বেশি সময় লাগতে পরে।

Bilirubin (Total)

  • আর্জেন্ট রিপোর্ট ডেলিভারি সময় ১-২ ঘণ্টা
  • নরমাল রিপোর্ট ডেলিভারি সময় ৬-৭ ঘণ্টা বা ১ দিন।

Bilirubin (D/I)

  • আর্জেন্ট রিপোর্ট ডেলিভারি সময় ১-২ ঘণ্টা
  • নরমাল রিপোর্ট ডেলিভারি সময় ৬-৭ ঘণ্টা বা ১ দিন।

 

বিলিরুবিন টেস্ট নরমাল কত ?

 

bilirubin D/I test report

Bilirubin (Total) এর ক্ষেত্রে

  • প্রাপ্ত বয়স্ক : 0.30 থেকে 1.00 mg/dl
  • নবজাতক : 0.60 থেকে 10.50 mg/dl.

Bilirubin Direct এর ক্ষেত্রে

  • UpTo 0.60 mg/dl (সর্বোচ্চ 0.60 পর্যন্ত নরমাল)

Bilirubin টেস্ট রিপোর্ট ইউনিট : mg/dl

বিলিরুবিন বেড়ে গেলে কি হয় বা কি কি কারণে বেড়ে যেতে পারে:

রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে:

  1. লাল রক্ত ​​কণিকার অত্যধিক ভাঙ্গন: যখন লোহিত রক্তকণিকা তাদের জীবনকালের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে এবং ভেঙে যায় তখন বিলিরুবিন তৈরি হয় । যখন লোহিত রক্তকণিকা ভাঙ্গনের মাত্র বৃদ্ধি পায়, যেমন অ্যানিমিয়া বা হেমোলাইটিক ডিসঅর্ডারে তখন বিলিরুবিন মাত্র বৃদ্ধি পায়।
  2. লিভার কাজ না করা: লিভার বিলিরুবিন প্রক্রিয়াকরণ এবং পিত্তে এটি পাঠিয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যদি লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা ঠিকভাবে কাজ না করে, তখন এটি ঠিকমত বিলিরুবিন প্রক্রিয়া করতে সক্ষম হয় না, যার ফলে এটি রক্তে বেশি মাত্রায় হতে পারে। লিভারের রোগ যেমন হেপাটাইটিস, সিরোসিস বা লিভার ক্যান্সারের কারণে বিলিরুবিন অধিক মাত্রায় বেড়ে যেতে পারে।
  3. পিত্ত প্রবাহে বাধা: পিত্তনালীতে বাধা সৃষ্টি হলে যকৃত থেকে পিত্তথলি এবং অন্ত্রে পিত্ত সঠিকভাবে যেতে পারে না। এর ফলে রক্তে বিলিরুবিন জমা হতে থাকে। পিত্তনালীতে বাধা সৃষ্টির সাধারণ কারণগুলি হচ্ছে পিত্তথলি টিউমার ।
  4. বংশগত প্রাপ্ত রোগ: কিছু জেনেটিক সমস্যার কারণে বিলিরুবিন উৎপাদন বৃদ্ধি বা বিলিরুবিন প্রক্রিয়াকরণ ব্যাহত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, গিলবার্ট সিন্ড্রোম একটি অবস্থা যেখানে লিভার বিলিরুবিন সাভাবিক প্রক্রিয়া করতে পারে না, যা বিলিরুবিনের মাত্রা হালকা উচ্চতার দিকে নিয়ে যায় ।

আরও পড়ুনঃ uric acid test কেন করা হয় ? ইউরিক এসিড বেশি বা কম হলে কি হয়? নরমাল কত, খরচ কত? || uric acid test details.

 

বিলিরুবিন কমে গেলে কি হয় বা কি কি কারণে কমে যেতে পারে:

বিভিন্ন কারণে রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা কমে যেতে পারে-

  1. দেহের বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায়: যদি মাত্রা অধিক বিলিরুবিন একটি অস্থায়ী রোগের কারণে হয়ে থাকে, যেমন ভাইরাল সংক্রমণ বা ওষুধ-প্ররোচিত লিভারে ক্ষত, তাহলে রোগের সমাধান বিলিরুবিনের মাত্রা হ্রাস করতে পারে ।
  2. যকৃতের রোগের চিকিৎসা: বিলিরুবিনের উচ্চ মাত্রা যদি লিভারের রোগ যেমন হেপাটাইটিস বা সিরোসিসের কারণে হয়ে থাকে, তাহলে চিকিৎসা করে লিভারের কার্যকারিতা সঠীক করতে সাহায্য করতে পারে। লিভারের কার্যকারিতা ভালো হওয়ার সাথে সাথে বিলিরুবিন প্রক্রিয়াকরণের উন্নতি হয়, যার ফলে বিলিরুবিনের মাত্রা হ্রাস পায়।
  3. পিত্ত নালী রোগের অপসারণ: যদি বিলিরুবিনের অধিক মাত্রা পিত্তনালীতে বাধার কারণে হয়ে থাকে, যেমন পিত্তথল টিউমার, তাহলে টিউমার অপসারণ বা বাইপাস করলে পিত্তের স্বাভাবিক প্রবাহ হয় । এটি বিলিরুবিনকে সঠিকভাবে নির্গত করতে দেয়, যা বিলিরুবিনের মাত্রা হ্রাস করে।
  4. লোহিত কণিকা : বিলিরুবিন হল লোহিত রক্তকণিকা ভাঙ্গনের একটি উপজাত। যদি অন্যান্য রোগের কারণে লাল রক্তকণিকা ধ্বংস হতে থাকে, তাহলে সেই অবস্থার চিকিৎসা করলে বিলিরুবিনের মাত্রা কমে যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কিছু অ্যানিমিয়া বা হেমোলাইটিক ডিসঅর্ডার লাল রক্ত ​​​​কোষের উত্পাদন কমিয়ে দেয় এবং বিলিরুবিন উত্পাদন হ্রাস করতে পারে।

 

Unconjugated (indirect) bilirubin :

নবজাতকের জন্ডিস: নবজাতকদের মধ্যে, indirect bilirubin সাধারণত অধিক মাত্রায় দেখা যায়। এটি নবজাতক জন্ডিস নামে পরিচিত । এটি সাধারণত একটি অস্থায়ী এবং ক্ষতিকর অবস্থা সৃষ্টি করে। এটি ঘটার কারণ হচ্ছে নবজাতকের লিভার পরিপক্ক হতে এবং দক্ষতার সাথে বিলিরুবিন প্রক্রিয়া করতে পারে না , এটি বয়স এর সাথে সাথে ঠিক হয়ে যায় ।

জন্ডিস রোগের লক্ষণ:

জন্ডিস এর জন্যে রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায় যার কারণে ত্বক, চোখ এবং শ্লেষ্মা ঝিল্লি হলুদ হয়ে যায়। Bilirubin হল একটি হলুদ রঞ্জক যা লাল রক্তকণিকার স্বাভাবিক ভাঙ্গনের সময় তৈরি হয়।

bilirubin test sample tube

 

যখন বিলিরুবিন এর মাত্রা বৃদ্ধি পায়, তখন নিম্নলিখিত উপসর্গ দেখা দিতে পারে:

  • ত্বক এবং চোখের হলুদ হওয়া: জন্ডিসের সব থেকে বড় লক্ষণ হল ত্বকের হলুদ বিবর্ণতা এবং চোখের টিস্যুতে সাদা অংশ বিলিরুবিন জমা হওয়ার কারণে হলুদ রঙ দেখা দেয়।
  • গাঢ় প্রস্রাব: বিলিরুবিন প্রস্রাবকে স্বাভাবিকের চেয়ে গাঢ় রঙে পরিণত করে, প্রস্রাব অ্যাম্বার, বাদামী বা চা-রঙের হতে পারে।
  • ফ্যাকাশে মল: জন্ডিসের কারণে মল হালকা বা মাটির রঙের হতে পারে। এটি ঘটার কারণ হচ্ছে bilirubin অন্ত্রে পৌঁছায় না এবং মলের মধ্যে নির্গত হয়, যার ফলে পিগমেন্টেশনের অভাব হয়।
  • চুলকানি ত্বক: জন্ডিসে আক্রান্ত কিছু রোগী চুলকানি বা প্রুরিটাস অনুভব করতে পারে। এই চুলকানি বিরক্তিকর হতে পারে।
  • ক্লান্তি এবং দুর্বলতা: বিলিরুবিনের উচ্চ মাত্রা সামগ্রিক শরীরকে প্রভাবিত করতে পারে, যার ফলে ক্লান্তি এবং দুর্বলতার অনুভব হয়।
  • পেটে ব্যথা এবং অস্বস্তি: কোন সময় জন্ডিসের সাথে পেটে ব্যথা বা অস্বস্তি হতে পারে। এটি জন্ডিসের কারণ যেমন পিত্তথলি বা লিভারের ক্ষত এর ফলে হতে পারে।

আজকের পোস্ট এই পর্যন্তই যদি পোষ্ট টি ভালো লেগে থাকে অবশ্যই সবার মাঝে share করে ছড়িয়ে দিন। আর নতুন নতুন টেস্ট এর আপডেট পেতে অবশ্যই আমদের ফেসবুক পেজ oviggobd তে একটি লাইক দিবেন ধন্যবাদ।

Leave a Comment